শরীর থেকে ঝরছে আদরের অজুহাত
গাঙে মিশেল ফুকো
বৃষ্টিতে ভিজছে মিশেল ফুকো— অনাবিল সবুজ ঘাসে
বিষণ্ণ গরুর নাফা। দূরে— ফুলের যৌনতা চুষে দিশেহারা
মৌমাছি নিঃসঙ্গ পাতার নীচে খুঁজছে ঘর।
গোয়ালঘরের গরু তুমি ডাকিছো — হাম্বাআ
পানাপুকুরের শীতল জলের ভীতর নামছে নরোম সন্ধ্যা। জল
পড়েনি, নড়েনি পাতাও তবু— মীনের আঁশ আঁকছে ফুকোর
যৌনক্ষুধা।
ও গাঙের মেয়ে— এই মরিচক্ষেতে — তোমার পাশে বাঁধা
গরুটা কার— ফুকোর নাকি গ্যাটোর?
কে অমন উত্তর দেয় তোমার মতো, সব শালা চুলোয় যাক,
ফুকো ডুবুক জলে শঙ্খের এই ভাঙা চর জানে, তুই হারামি আমার।
ঘৃণা
ভালোবাসা— সেইসব মৃত পাখিদের প্রতি যাদের ঠোঁট থেকে
এখনো ক্ষুধার গন্ধ সরেনি
ভালোবাসা— সেইসব মৃত পাখিদের প্রতি যাদের চোখ থেকে
এখনো নিজ সন্তানের হাসিমুখ সরেনি
ভালোবাসা— সেইসব পাখিদের প্রতি যাদের উড়নক্ষম ডানা
তৈরীর পঁয়তাল্লিশ ঘন্টার ভিতরে বুক ঝাঁঝরা হয়ে গেছে
বুলেটের আত্মীয়তায়
ভালোবাসা— সেইসব পাখিদের প্রতি যারা ক্ষুধার্ত সন্তানের
জন্যে ভোর পাঁচটায় আমন ধান আনতে বেরিয়ে ফিরতে পারেনি ঘরে
ভালোবাসা— সেইসব পাখিদের প্রতি যাদের ডানার একাংশ
তুলার মতো উড়ে যাওয়ার পরও আকাশে উড়ছে পরম ক্ষিপ্রতায়
ঘৃণা, পরম ঘৃণা করার মানস নিয়েও ভালোবেসে ফেলি সেইসব পাখিদের, যাদের ডানায় রৌদ্রের ঘ্রাণ নেই, পালকজুড়ে জলের গল্প নেই, ঠোঁটে নেই ধানের ঘ্রাণ কিংবা ক্ষুধার কোন অনুবাদ— অনন্ত উড়ালের মতো, যারা
কেবল, কেবলমাত্র খাঁচায় থাকার কারণে শহীদ হতে পারেনি
আকাঙ্ক্ষাবাদী মানুষের আঙুলে
কিছুটা গোপন তুমি কিছুটা দৃশ্য
ঠাকুরগাঁও কিংবা একটা আস্ত কুড়িগ্রাম তোমার ভিতরে
ঘুমায়ে আছে— তিল থেকে আঙুল নামছে বৃন্তের কাছাকাছি
যেখানে পরাজিত চোখ সমুদ্র ভেবে ক্লান্তির নোঙর
ফেলেছিলো— তানপুরার তারের মতো কেঁপে উঠছে নদীর
বাঁক; শরীর থেকে ঝরছে আদরের অজুহাত।
তোমার চোখ কি জিহোভা?
জিহোভা কি চোখের ভিতর খুলে এসেছে সিংহের লেবাস?
হলুদ ফুল, আত্মস্থ করো বাতাসের নিনাদ; কান্না পাঠানোর
বিশ্বস্ত বাহক— এসে খুলে দিচ্ছে কুন্তলের ধর্মাবরণ।
ঠাকুরগাঁও কিংবা একটা আস্ত কুড়িগ্রাম ফুঁপিয়ে কাঁদছে
তোমার গ্রীবাভঙ্গিতে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত লাল লাল বাড়িগুলো
জোছনার আগুনে পুড়ে খাক হাড়; অস্থিগুলো সাপলুডু
খেলতে বসছে। করোটিকে সাপের মুখে রেখে মঁই বেয়ে উঠে
যাচ্ছে পায়ের গোড়ালি।
দীর্ঘদিন ইটের নিচে থাকায় যে ঘাস হলুদ হয়ে গেছে তার প্রাণ খুঁজছো ইটভাটায়— গাধাগুলো গরু হয়ে গেছে।
তুমি ঘুম ভুলে হঠাৎ বলেছিলে— অন্ধকার আঁকড়ে ধরে আছে বৃন্তের শহর৷ কাল যুদ্ধ বাঁধবে জেনে— আমি চেয়েছি
রণক্ষেত্রের ধোঁয়া উঠা ঠোঁট কিংবা যুদ্ধটা আজই বাঁধুক
আভাসে
সঙ্কেতে
মাথার ঘিলু থেকে উড়ে যাচ্ছে জোনাক। ঘাসেদের বুকে
তার যৌনতার আলো লুকাবে ভেবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে প্রজাপতি।
অন্ধকার অনেকটা তোমার চোখের মতো— যা আমি চোখ
বন্ধ করে যেমন দেখি চোখ খোলা রেখে তারও অধিক দেখি
‘ওড়না সরাও তুমি— ঘুম একপাক একপাক মৃত্যু তুমি ঘাঘরা ওড়াও’। উদ্বাস্তু শিবিরের অনেকগুলো ক্ষুধার্ত শিশু হা করে তাকিয়ে দেখছে জরির ভিতর ঘুমিয়ে যাওয়া স্তনের শহর।
যুদ্ধটা কাল বাঁধার চেয়ে আজই বাঁধুক— অন্ধকারের মতো
শাশ্বত শিশ্নের কাছাকাছি পড়ে থাকুক দেশের ধ্বংসাবশেষ।
নিগন্থের অর্গাজম
১
গাঢ় আঁধার ছেদি তোমার হাসির মতো সকাল উদিছে
ব্যাধি ফুরালে মাগি সন্ধের ভাষার মতো অনন্ত উড়ান
জবা ফুলের রাগ দুলিছে ঘৃণার ব্যাস ছিড়েছে আঙুল
সেই পুরনো রোগ গেরুয়া বসন খুলে মেঘেরা কাঁদছে
চল ভ্রমণে ভুলি ক্ষতের স্পর্ধা উড়ে পলাশ বাতাসে
২
বাদামী বিকেল করিডোরে ছায়া রোধ করে দাঁড়াতেই মর্মধ্বনি
ফুরিয়ে যাচ্ছে, হ্রী। কে অমন বাজায় বাঁশি শিরদাঁড়া দিয়ে?
আমি চিৎকারি হৃদে— কুন, ফায়াকুন — পানি আগুন হয়ে
রচে জাহান্নুম। হ্রী, গলায় ঝুলছে নক্ষত্রের ক্ষসে পড়া আলো।
কৃপীট
১
পুরনো দেয়ালে কুচফল রেখে ক্ষুধা গুনছে অপেক্ষা
আকাশ ডাকছে, মেঘদল ছুটে যাচ্ছে বিরান দৃষ্টিতে
মানুষ আঁকছে পাখিরোগ। নিজ ক্ষুর হারিয়ে ঘোড়াটি
খুনের ভিতর ডানাহীন পাখি খুঁজে মরছে নিয়ত
কে বুঝে কার কথা, কাহার ঈশারা দোলায় হৃদি
ফিরেছে শূয়র শাদাফুল ফুটে আছে শিয়রে তাহার
হাতের রেখায় কুচকুম্ভ ছায়া ফেলে গিলছে আহার
মানুষ মরছে, অভিনয় তবু দেখো কমেছে রাজার?
মাথার উপরে বাজপাখি, জিব ছিঁড়ে খেয়েছে আমার।
কে বলে কার কথা, কাহার দুখেতে মানুষ কাঁদে?
২
কথা বলো রাত, আগুনলিপিতে ভর করে উড়াও ইঙ্গিতের জাহাজ। কেউ লেবুপাতার উপরে লিখছে ঘ্রাণের তাবিজ,
তার খোঁজে জ্বলছে জোনাক। পৃথিবীর সব আলো ফুল হয়ে ফুটে পতঙ্গপুচ্চে;
কথা বলো রাত, মাটির বুক তরজমা করছে সুন্দরতম
নিঃসঙ্গতা