বৃষ্টির হরেকদিনে
এই যে নুয়ে পড়া মেঘ নিয়ে
পৃথিবীতে এখন বর্ষাকাল
তখন জবজবে ভেজা পাতার নিচে
জমে থাকা জল যেন গর্ভাশয়
বৃষ্টির এইসব ফোঁটা ফোঁটা উৎসবে
পাখিরা পোষে রাখে কেবল দীর্ঘশ্বাস!
এসো তবে আজ কদম ফুলের কথা বলি
হাসনাহেনুর সান্নিধ্য পাওয়া সেই বাড়িটার কথা বলি
বলি গোসাঁই বাড়ির চুলার ধোঁয়ায়
নেচে ওঠা ভোরের বাতাস হয়েছে কতটা ভারি
যেহেতু অতিবৃষ্টি মেলে ধরেছে আকাশ
যেহেতু আমাদের ঘরের টুইয়ে পাতাঘনিষ্ট
পেয়ারা গাছ, কেমন হেলে যায়
আমাদের তিনকাঠা জমিনের উপর একটাই বাড়ি
বাড়িটার ভেতর চুইয়ে চুইয়ে নেমে আসে সকাল
একটু রইদের ছলকায় সিঁড়িটার সামনে
নেতিয়ে পড়ছে রেইনলিলির যত গোপন আলিঙ্গন
পিছলা কলপাড়, শ্যাওলা কড়া
বড়ইগাছ বুকে লটকানো পুরনো
একজোড়া স্যান্ডেল-
কতদূর দুপুরের সুর বেয়ে হায়!
ফুটে থাকে লাল লাল চন্দনের গুটা
অতিকায়-
এ দুপুর যায় না বুঝা
মেঘ সরানোর পাশে অনর্থ রোদ রয়
মানুষ যতটা কাছে তার থেকেও
কাছে নেমে আসে যেন বজ্রপাত
ওই প্রস্তর পেরিয়ে পাখিরা
ঋতুর কাছে থাকে বসে ম্রিয়মাণ
পাশাপাশি ঝলমলে পোস্টার, শিশুরা কুড়াচ্ছে জাম
দূরে একটা ডোবা
সেখানে ক্ষুব্দ মাছরাঙা এক
মুখ নিচু করে দেখছে জলে
মাছেদের ভূগোল-
একটা হুড তোলা ব্যাটারিচালিত রিক্সা
বৃষ্টির দিকে খুলে রাখছে মুখ তার
আহারে কোনদিকে যাইতে যাইতে
আমার সুতি জামা ভিজে আবার শুকায়
ও মোলায়েম বাতাস
দেখ নিকোটিন লেগে আছে আমার ঠোঁটজোড়ায়
এখনো অজর বৃষ্টি ঝনঝনায় পিচকালো রাস্তায়
ও সবুজ, অনাদিকাল
পরখ করে দেখ চোখ আমার
কোথায় কেমনে দৃশ্যেরা ফুরিয়ে যায়
এই যে বাইপাস মোড়
জ্যামে আটকে আছে শাদা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স
যেখানে মানুষের চঞ্চল পা
আহারে চিনতে পারছে না কেউ আমায়
একটা উইন্ডো খোলা টিকেট কাউন্টার
তাতে নামছে মানুষের কোলাহল!
আর উঁচুতে তাকিয়ে দেখছি
এত বৃষ্টিতে নিরীহ বিলবোর্ডে
বিজ্ঞাপনের মেয়েটা ভিজছে নিরাক
এখানে ছেয়ে গেছে ক্লান্তি
বেঁচে থাকার ভাঁজে নড়ে তা
যেন দূরে ডুবছে বন্যাকবলিত শহর তোমার
যেখানে আদুরে বেড়ে ওঠা শৈশবে
শিশুরা কলার ভেলা সাথে নিয়ে খেলছে সাঁতার
শটি বুনোফুল-
কি সুন্দর টকটকে রঙ
ফুরফুরাইয়া উড়ে মেঘের মতন
ততদূরে হয়তোবা জানিনা আমি
যেইখানে নিরবে ফুল হয়ে ওঠে
ঘোলারঙ-
তুমুল বিষটির এই না দিনে
ফকফকা ফেরিঘাট
কাঠের পাটাতনে কিছু শালিক দেখায় দাপট
সেইখানে-
দূরে সবুজের দেয়াল রেখেছে ঢেকে
নিজ নিজ যত তাহাদের গ্রাম
আর পাড়ে ভাসমান ছোট বড় নৌকাগুলোর
যুথবদ্ধ কাঁধে কাঁধ
তখন ডেলিরিয়ামে রোজকার মতো
ঘুমিয়ে পড়া তুমি চাঁদ
এইখানে আমি চায়ের দোকানের টংঘরে
থাকি বসে-
সাথে কতক খালি গতর, তারা টাকা গুণে
তাদের হাতে ঠোঁটে জ্বলে বিড়ি
বাতাসে ধেয়ে আসে বারুদের আঁচ
যখন একটা ধূসর সন্ধ্যা নেমেছে
নদীটার ওইপার-
ভালোবাসা ভাই
অনেক সুন্দর কবিতা