পাখির ডাকের সাথে উড়ে যায় মন
বসন্ত এক ঋতুর নাম
এই যে এতো বসন্ত বসন্ত খেলা
তবে কেন ফুল ফুটে না,
একদল যুবক আর একদল যুবতী
পার্কে গাছের আড়ালে এতো ফিসফাস করে
তবু টিনের চালে ছাদে জ্যোৎস্না নামে না।
দেশে দেশে এতো গান-কবিতা
ভাষণ বক্তৃতা-
জাতিসংঘে এতো মৌমাছির উড়াউড়ি
তবু রাখাইনে নাফের জলে হলুদ হাসে না!
সুবর্ন চরে যে নারী রজঃস্বলা হয়
কেন তার আতংক কাটে না!
জাতিসংঘ তাহলে সরিষার খামার, পাড়ার দাবার ক্লাব,
বসন্ত তাহলে কেবলই এক তরল ঋতুর নাম?
কী করে জানে পাখি
পাখির ডাকের সাথে উড়ে যায় মন
কী জানি কী করে পাখি এতো অনুভূতিপ্রবণ
কী করে জানে পাখি ভাসানের দেশে থাকে এক নারী
তার চোখে জল!
কী করে জানে পাখি কৃষ্ণলতা নামে এক নারী
একা ঘরে খিল এঁটে প্রতিদিন পাঠ করে প্রেমের কবর!
হলুদ রঙের দিন পুড়ে গেছে
এখন আর কোকিল ডাকে না
বাগানে ফোটে না তেমন কোন ফুল
বিষণ্ন কপালে এলো চুলে ভেজা হাহাকার উড়ে।
কাঠঠুকরা ঘুনপোকার হুলস্থুলে বনভূমে বৃক্ষ ভাঙে
মানুষ কী তবে বৃক্ষের সহোদর অথবা সহোদরা,
নাহলে কেনো চাউনিতে ঝুলছে এমন বরফের মাছ
কৃষ্ণলতা কেনো ভাঙছে বারোমাস
ডিমের খোলসে কেনো হুহু করে বাতাস!
চাঁদ উঠে অথচ গলে না আলোর প্রবাহ
আদিগন্ত আকাশ হাসে অথচ মাটিতে কোমলতা নেই।
ভাসানের দেশে কেবল বৃষ্টি
বুকের গহীনে কেবল তাপিত ঢল
ঢলে ঢলে ভেসে গেছে মেহেদির রঙ
সোনার পায়েল পায়ের
পাখি কী করে জানে এইসব গোপন খবর!
সড়ক
সড়কতো ছায়াময় হওয়ার কথা ছিলো
দু’ধারে লতা-গুল্ম ঘন বনবীথি-মায়া,
পাতাবাহার ছড়ানো বুকের সড়ক-
ভালোবেসে আঙুল ধরে পৌঁছে দিবে স্বজনবাড়ি।
যাদের মা নেই তারা বোনের অপত্য স্নেহে
মুছে নিবে তপ্ত দিনের ঘাম
অথবা মুছে নিবে ভিজে গেলে খুব আগুনের জল।
অথচ সড়ক কেবলই পাথর
কালো কালো ফণা
উদগত বিষকাঁটা
অসভ্য শুয়োর।
ফালা ফালা পা ফেলে আহত মানুষ যায়
কতোদূর যাবে তারা
কতদূর গেলে এক ফালি চাঁদ উঠে!
কে জানে সড়ক শরণার্থী কি না
শিবিরে শিবিরে খুঁজে অযথা সবুজ ঠিকানা!
স্বপ্ন বিলাসী মন বলে কথা, দেখে যায় দেখে যায়
দূরে-কাছে তবু প্রতিদিন দেখে যায়
জেগে থাকে হৃদয় এক শৈলী-স্বরূপ জ্যোতি শিখা!
পাহাড়ে আলো জ্বালাও
পাহাড়ে আলো জ্বালাও
নাহলে পাহাড় ভাঙবে আরো।
সবুজ পাহাড়ের বুকে খসখসে হায়েনা
হাতির দাঁত
কালো কালো নখরাঘাত
রক্তের ফিনকি সারিসারি লাশ,
পাহাড় পড়ে আছে পাহাড়ে
যেনো ধর্ষিতার করুণ ভেজা উরু!
পাহাড় তো মুজিবের তর্জনীর চেয়ে বড় নয়
পাহাড় হতে পারে জনকের চশমার আধেক ফ্রেম,
পাহাড়ে পাহাড়ে নিয়ে যাও তার ফ্রেমের আলো
সাম্য আর সম্প্রীতির বার্তা।
পাহাড়ে আলো জ্বালাও
নাহলে পাহাড় ভাঙবে আরো।
অমলিন অসুখে থাকে পথিক
ক্ষতচিহৃ বড় হয়, তবুও পথিক হাঁটে
কাঁচাবাজার চাল-ডাল সব্জি লবণ মহলে
হাসে না চকলেটের মতো জীবনের সূর্য শৈলী
হাসে না শৈশবে কুড়ানো কুল
তবুও বেঁচে থাকে পথিক পথে সন্তর্পণে।
বেদনারা দেবশিশু ভালোবাসে পবিত্র নিরিবিলি
তবুও নিভে গেলে কোথাও কেরোসিন বাতি
সরল হাস্যোজ্জ্বলে বলে-
এই যে মশায়, ধরুণ মোমের মিঠে আলো
আপাতত খানাখন্দ অতিক্রম করুন,
এইসব মানবিকবোধ কেনো জানি আদিখ্যেতা হয়ে যায়
তবুও পথিক পড়ে থাকে পথে!
একদল শামুকপ্রেমিক বিমানে চড়ে
উড়ে উড়ে ঘুরে আমেরিকা ইউরোপে,
একদল রৌদ্রস্নানে শিশ্ন আর স্তনাগ্রে বুলায় হাত।
তারা মনে করলে অনায়াসে মাটিতে বাড়ি বানাতে পারে-
ডালিমের ছায়ায় ডাকবে ইস্টিকুটুম,
পেয়ারা তলায় গড়াগড়ি জ্যোৎস্নায় গড়ে উঠবে
টুইনটাওয়ার ভ্রমণের আনন্দ ইমারত
টুইনটাওয়ার কি ঘাসের নাকে বসে থাকা-
শীতের শিশিরের এক বিন্দু হাসির চেয়ে উঁচু,
অথবা একটি বাড়ির খোলা দক্ষিণে জানালার চেয়ে বড়?
পৃথিবীতে এতো কিছু হলো
অথচ একটি বাড়ি হলো না কোথাও,
মানুষ শেষাবধি থেকেই গেলো বানরের বাসায়
আর একদল পথিক থেকেই গেলো অনাবাসিক
ক্ষতের ঔজ্জ্বল্যে অমলিন অসুখে!
দাঁড়িয়ে থাকে কালো মহিষ
রাত পড়ে যায়
দীর্ঘ পা ফেলে দাঁড়িয়ে থাকে খসখসে কালো মহিষ
লোকে বলে অন্ধকার বাঁকানো শিং নিয়ে-
নাহলে সাইকেল থেকে পড়ে কেনো থেতলে যাবে সুঠাম যুবক,
এক চোখা ফ্রেমে নুয়ে থাকা বৃদ্ধ কেনো
হাতের লাঠিতে খোঁজে ফিরবে স্বদেশের মুখ
কেনো হোল না তার সামান্য একতলা ছাদ!
লতাগুল্ম গাঢ় ঘন বনবিথী হারিয়েছে সবুজ দিনের গান
শোভন ছায়া,
নগরীর বুকে দুয়ার আঁটা সরু সরু পথ
নগরীর বুকে কী সুন্দর তপ্ত শামুকের ওয়ার্কসপ!
সুচেতনা ভুলে গেছে জল ঝলমল সরল মন
সেই থেকে ঝরে গেছে বাগান
সেই থেকে পৃথিবীতে আর কোন ফুল ফুটে না
সেই থেকে সুবাসিত হাওয়ায় দেখি না উতল বসন্ত।
দেখি দুরন্ত বালক ভুলে গেছে বগল চাপা বই
কেনো তার হাতে দাহের দাগ
স্কুল কেনো এতো দূর?
পোশাক কারখানায় ওড়না হারিয়ে মেয়েটি এলো বলে
কেনো এতো ফিসফাস গাঁয়ে গাঁয়ে
সভ্যতা কি তবে এখনো গাছের বাকল?
বিশাল সেক্রিটারিয়েটে প্রতিদিন পতাকা উড়ে পতাকা নামে
কিশোরী তবু খোঁজে পায় না শাপলার বিল।
রাত পড়ে যায়
দাঁড়িয়ে থাকে বাঁকানো শিং নিয়ে খসখসে কালো এক মহিষ!
সুন্দর লেখনী। অভিনন্দন সহজাত।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
মুগ্ধ হলাম।
মনোমুগ্ধ কবিতা।