পঞ্চস্বর ৫
শামীম আশরাফ
সত্যপূজো
কাজা নামাজের পেছনের কাহিনি সে গোপন রাখে
সুডৌল নারীর সবখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
মিছেমিছি পাজামাটা ভেজায়।
সেখানে হালকা হলুদ বাদামীর মতো
একটা আদিম মানুষের ছায়া ঘুরে বেড়ায়
আমাদের পাল্টে যায় পোশাকের সুরত।
শরীরের ভাঁজে সে ধার দেয় চিকচিক
যৌবনের ভোতা দায়ের নেতিয়ে পড়া
সময়ের বাতাসে বেঁকে যাওয়া গাছের মতো।
কাজা নামাজী পেখম তুলে কই যায়
সূর্য ডুবে গেলে তার কী খুব মনে পড়ে
পতিতালয়ের ধূসর ব্লাউজ!
ইসকনের নারীটি পূজোপকরণ সাজিয়ে
সম্মোহিত হয়-
দূরে ভেসে আসা মোমের সুগন্ধে
মানুষ মূলতঃ মানুষের কাছে গিয়ে সত্যপূজোয় মাতে।
রহসিদের ধানক্ষেত
পাকা ধানের গন্ধ শুঁকতে গিয়ে
রহসির ওড়নায় ঢেউ খেলা দেখে আসতাম
রহসিদের ধান, রহসিও ধানের মতোই গন্ধের
ধানক্ষেতের মাঝখানে ফিঙে-ফড়িং উড়ছে
আরও আরও পাখিদের ওড়াউড়ি
বাতর ঘেঁষে বসে বসে কবে থেকেই দেখছি
বাড়ন্ত পাইজাম ধানের আকাশে তাকানো
হেমন্তে চলো ছাদে যাই
লাউয়ের ডগা বেঁকে উঠছে
যেখানে বাঁশের কঞ্চি থাকে
শোলায় শিমগাছ থাকে জড়িয়ে
সেখানে ইটের ভাস্কর্য হয়ে আছে
রহসিদের ধানক্ষেতের চারা
রহসি নামের লালকুড়ার চাল
নিতে পারি নাই ভালোবেসে
যে নিলো বুকের গোলায়
নীলাকাশের পাটক্ষেতে তার কি বিকাল নামে?
ধানক্ষেতের পাশে ইঁদুরের বসবাস বাড়ে
গোছায় গোছায় সারি করে দিতে ভুল হলে
হেমন্তে সোনালী স্বপ্নকে টেনে নেয়
মাটির গর্ত
শামীমা শারমিন
শামুক জীবন
আমি বরং শামুক হয়ে থাকি
ক্যারাপেসে মুখ লুকিয়ে রাখি।
না হয় হয়ে কালো রঙের মেঘ
সামলে রাখি শশীর হাসি বেগ।
শামুক জীবন কামুক দৃষ্টি বানে
ঝড়ের ঝাপটা, ঘূর্ণি আঘাত হানে।
আমি বরং রাতের আঁধার হয়ে
খুব নিরবে সকল গেলাম সয়ে।
আমায় ছাড়া অচল গৃহ ধরা
বিচিত্র এই ভুবন মনোহরা।
আমি নারী জঠর কুঞ্জ কলি
মুক্তো ভ্রুণ যত্নে বেড়ে তুলি।
অভিশাপ দিওনা
এ আগুনমুখো রোদে পুড়বে প্রজন্ম আমার
দূষিত বাতাসের বিষবাষ্পে মুছে যাবে অস্তিত্ব।
তোমার জন্যে রেখে যাব রিজার্ভ ব্যাংক
ঝকঝকে ফ্ল্যাট, দামী কার্পেট, ঠান্ডা গাড়ী।
তুমি মেঘের কোসন জড়িয়ে, সোফায় শুবে
প্রযুক্তির দাসত্বে কাঁদতে পারবে না আর
তোমার কাচের দেয়ালে হবে ইচ্ছের প্রতিফলন
বর্ষার ঝুম বৃষ্টির শব্দ শুনতে ইচ্ছে করবে সেদিন।
মুহুর্তেই ভেসে উঠবে মেঘ মুক্ত শরৎ আকাশ
কাশফুল, সবুজ ধানের অসীম ক্ষেত।
গুগলে দেখে নিবে তোমার পূর্ব পুরুষের যুগ
তীব্র ক্ষোভে তাদের অভিশাপ দিও না।
কার্বন, সীসার অস্পৃশ্য পাহাড় করতে গিয়ে
তারা সবুজ রঙ আগলে রাখেনি,
একটা গাছ লাগানোর জায়গাটুকুও নষ্ট করেনি।
তোমার মুক্ত বাতাসে বেড়ে উঠার কথা ভুলে
তারা ভালোবাসা বাঁচাতে জীবন দিয়েছে,
তবুও একটা সবুজের জীবন করেনি দান।
শরীফ মল্লিক
অসংখ্য শেল আর মৃত স্বপ্ন
অসংখ্য অসংখ্য শেল বিঁধে যাচ্ছে বুকে
প্রতিনিয়ত অসহ্য যন্ত্রণার ভার
বয়ে চলেছি একাই। কোরান-পুরাণ
অথবা প্রাচীন গল্প; সবি যেন মেকি।
এই যে সমাজ মানবিকতার বাণী
নির্লজ্জ প্রভুত্ব আর গোপন দাসত্ব
তারে আমি ঘৃণা করি, ধ্বংস হোক সব
তোমাদের গল্প ছুড়ে ফেল ডাস্টবিনে।
সর্বত্র আমিত্ব আর পিতৃত্বের বাণী
তন্ত্র মন্ত্র আর ষড়যন্ত্রের ছায়ায়
অবলীলায় মিশেছি অগণিতবার
দেখেছি অসংখ্য শেল আর মৃত স্বপ্ন।
অসংখ্য অসংখ্য শেল বিঁধে আছে বুকে
শোন, যন্ত্রণায় চিৎকার করছে কেউ।
একটি উচ্ছেদ বিরোধী ইশতেহার
এ কোন খাস জমি নয় যে
উচ্ছেদের ভয় দেখাও আমায়।
বহু বছর ধরে বংশ পরম্পরায়
এখানেই বাস করে আসছি আমরা
আর
ফলাচ্ছি সোনার ফসল।
আমরা কারো হাতে পায়ে ধরে
বলি না-
প্রভু আমাদের রক্ষা করুন,
আমাদের সমস্ত ফসল গেছে ডুবে।
আমরা আসি নাই কোন বানের
জলে ভেসে
আমাদের শেকড় এই মাটির গভীরে
শক্তভাবে প্রোথিত আছে
আছে আমাদের লিখিত ইতিহাস।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এ জমির
মালিক আমি,
এর আছে পাকাপোক্ত দলিল:
আছে শ্রম আর ঘামের চিহ্ন।
এ জমি আমার,
আমার পূর্ব পুরুষের;
এ কোন খাস জমি নয় যে
উচ্ছেদের ভয় দেখাও আমায়।
রেজাউল হক রনি
মানুষপাখি
প্রকৃতপক্ষে মানুষ এক প্রজাতির পাখি
যারা মাটিতে বসে আকাশে উড়ে-
আকাশে উড়তে উড়তে যারা আকাশ খুঁড়ে-
আকাশ খুঁড়তে খুঁড়তে অন্য একটা আকাশ পাবে বলে
তারা আকাশেই হারিয়ে যায়।
ঘর
“ছাল-কুত-কুত-কুত-কুত….”
সেই কখন থেকে খেলে যাচ্ছে মেয়েটি।
দম বন্ধ করে গুটি পার করছে পায়ে পায়ে..
ছুটির দিনের পাকা রাস্তায়
ইটের সুড়কি দিয়ে কাঁচা হাতে আঁকা
ছকের একটা ঘর কিনবে বলে।
রোকসানা আফরীন
অনিবার্য চুম্বন সমূহ
তোমার এ প্রত্যাখ্যান
অনিবার্য জীবনে আমার।
আমি উপভোগ করি, করি যাচনা।
সাত রাস্তার কলঙ্ক, মেধা, বিপ্লব
আমার পায়ের পাতা, ছিন্নবীণা,
রক্তমুখী পতাকার মুখ,
জলজ নগ্নতায় ঘেরা
উদাসীন ডাকবাংলা মতো
তোমার উপেক্ষা
সয়ে সয়ে শুয়ে থাকে
বিমূর্ত অচেনা রেললাইনে
ইথারে-ইথারে, পর্যটনে-পর্যটন
ওহ এইভাবে লক্ষ চুম্বন সমূহ
কল্পনায় অনিবার্য হোক আততায়ী আলিঙ্গনসহ।
সিজোফ্রেনিয়া
২৯ নভেম্বরের আমি’টাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না
নিজের ভিতরেও
যে আমি’টা হেঁটে যাচ্ছি কাঁচপুর ব্রিজের দিকে
তার নাম হা-হুতাশ নয়
তার নাম আদিগন্ত ভোর
সিদ্ধার্থ যা যা জানত তার কিছুই জানি না
তবু বলতে ইচ্ছে করে ‘লোভ থেকেই দুঃখের জন্ম’
আর বাতি নিভে গেলে মানুষের মুখ যেমন অচেনা হয়
একদিকে গ্রহণ লাগা দিন তো অন্যদিকে
পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে যাওয়া নিশিন্দার বন
আসলে সিজোফ্রেনিয়া এসে ভর করে যদি
জলের নৌকায় পা ফেলে পা ফেলে
ক্রন্দন করি আমি আর জালালুদ্দিন রুমি…